চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: তিনি নিজেকে কখনও ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও বা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক দাবি করে। নিজের পরিচয়ে ক্যাব সভাপতি, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ব্যবহার করত হর-হামেশাই। এমনকি দেশি-বিদেশি নিয়োগকারী সংস্থার মহাব্যবস্থাপক, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী কিংবা পরিবেশবিদ ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পিছপা হতো না। নানা পরিচয়ে ঠান্ডা মাথার প্রতারণার ফাঁদ পাতত সে। অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন ডিটি রোড এলাকা থেকে ওই ভয়ঙ্কর প্রতারককে আটক করেছে র্যাব-৭।
নাম তার পারভীন আক্তার (৫০)। ডিটি রোড এলাকার ঢাকা ভবনের (ইউনিয়ন ব্যাংক ভবন) ১০ তলায় অবস্থিত ‘স্বীকৃতি’ নামক ভুয়া সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পারভীন ওই কথিত সংস্থার প্রধান।
মূলত কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক ও কর্মচারী র্যাবকে ‘স্বীকৃতি’ নামের ওই সংস্থা ও পারভীনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অভিযোগ করলে এ অভিযানে নামে র্যাব-৭। ভুক্তভোগীরা জানান, তারা সংস্থাপ্রধান ও তার নিয়োগ করা বিভিন্ন কর্মচারীর মিষ্টি কথায় ভুলে ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আশায় দৈনিক-সাপ্তাহিক-মাসিক ভিত্তিতে সংস্থাটিতে সঞ্চয় করেন। কিন্তু সঞ্চয়ের সীমা শেষ হয়ে গেলেও পারভীন আক্তার তাদের মূল টাকা বা লাভ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পারভীনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও তাদের চুরির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করত। এ ছাড়াও সে প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করত। কিন্তু সেগুলো আর ফেরত দিত না।
র্যাব-৭-এর আভিযানিক দল ওই অফিস এবং পারভীনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে সঞ্চয় ও ঋণ পাসবই, পূরণ করা চেক, স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও জমা বই, চুক্তিনামা, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প, ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের জরিমানা আদায়ের রশিদ, সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তার সিল, গ্রেফতার আসামির একটি ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
আসামি পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় এবং কোর্টে ১০টিরও বেশি প্রতারণা মামলা আছে। ২০১৪ সালে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমবায় অধিদফতর স্বীকৃতি সংস্থাটির লাইসেন্স বাতিল করে। র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিভিন্ন পরিচয়ে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে র্যাব-৭।